১৯৭৬ সাল থেকে গ্রাম আদালতকে কার্যকর করার প্রচেষ্টা শুরু হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৬ সালে গ্রাম আদালত বিধিমালা জারি করা হয়। অথচ এখন পর্যন্ত গ্রাম আদালত যথেষ্ট কার্যকর নয়। গ্রাম আদালতকে সক্রিয় করতে ইউএনডিপি ও ইইউর আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় নেওয়া প্রকল্পের ফলাফল উৎসাহব্যঞ্জক। ছোট বিরোধ দ্রুত ও ভালোভাবে নিরসন করা সম্ভব না হলে সেটাই পরে বড় বিরোধ ও জটিল দেওয়ানি বা ফৌজদারি মোকদ্দমায় গড়ায়। গ্রামের মানুষ আদালতে সহজে যেতে চান না। দেশের বহু স্থানে বিরোধ নিষ্পত্তির বিকল্প হিসেবে সমাজভিত্তিক সালিসের ওপর মানুষ নির্ভর করছেন। বহু স্থানে থানা-পুলিশের মধ্যস্থতার মাধ্যমে বিরোধ সুরাহার বিস্তার ঘটছে।
গ্রাম আদালত ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে পাঁচজনের একটি প্যানেল নিয়ে গঠিত। এই প্যানেলে যদিও বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস কমিশনের সদস্য নেই, কিন্তু দুটি কারণে গ্রাম আদালতের কার্যক্রম সুপ্রিম কোর্ট ও প্রধান বিচারপতির প্রশাসনিক এখতিয়ার ও নজরদারিতে থাকার দাবি রাখে। প্রথমত, গ্রাম আদালত বাংলাদেশের বিচারিক ক্ষমতা অনুশীলন করে। দ্বিতীয়ত, গ্রাম আদালতের দেওয়া যেকোনো আদেশ বা রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করতে হয় জ্যেষ্ঠ সহকারী জজ এবং সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে। সুতরাং গ্রাম আদালত অধস্তন আদালতেরই অবিচ্ছেদ্য অংশ। এর তদারকি জেলা ও দায়রা জজের ওপর ন্যস্ত হওয়া উচিত।
গ্রাম আদালতের কাঠামো পুনর্গঠনের দাবি রাখে। ইউপি চেয়ারম্যানরা দলীয় প্রতীকে নির্বাচিত হন। আদালত পরিচালনায় চেয়ারম্যানের নিরপেক্ষতা প্রশ্নবিদ্ধ হলে পক্ষগণের দরখাস্তক্রমে প্রতিকার দিতে পারেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। পদাধিকারবলে চেয়ারম্যানকে আদালতের নেতৃত্বদানের ভূমিকা পালনের রীতিতে পরিবর্তন আনা যেতে পারে। ইউএনও প্রতিটি ইউনিয়নের জন্য গণ্যমান্য ব্যক্তিদের তালিকা তৈরি করবেন এবং তা জেলা জজের কাছে পাঠাবেন। জেলা জজ প্রয়োজনে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার (তদন্ত) কাছ থেকে তালিকাভুক্ত ব্যক্তিদের বিষয়ে পূর্ব বৃত্তান্ত জেনে নেবেন। এভাবে জেলা জজের সুপারিশে গ্রাম আদালতের মুখ্য বিচারক এবং তাঁর সঙ্গে পরামর্শে অন্য চারজন নিযুক্ত হবেন। গ্রাম আদালতকে দ্রুত সক্রিয় করতে প্রধান বিচারপতির নির্দেশনায় জেলা জজ বিদ্যমান আইনের আওতায় এখনই উদ্যোগী হতে পারেন। প্রথম কাজ হবে গ্রাম আদালত যে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের তদারকি ও একটি বিশেষ আগ্রহের বিষয়, জনমনে তেমন ধারণা তৈরি করা। এ প্রসঙ্গে ২০১৪ সালের একটি উদাহরণ উল্লেখ করা যেতে পারে। হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলার একটি চৌকি আদালত লক্ষ করেন যে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নগুলোর গ্রাম আদালতে প্রায় ৬০০ মামলা ঝুলে আছে। আদালত চেয়ারম্যানদের সঙ্গে নিয়মিত আলাপ-আলোচনা ও পর্যবেক্ষণ শুরু করেন। এক বছরের ব্যবধানে মামলার সংখ্যা ছয়টিতে নেমে আসে। সুতরাং প্রায় ৪০ লাখ বিচারাধীন মামলার চাপে জবুথবু দেশের বিচারব্যবস্থায় গতিশীল ও কার্যকর গ্রাম আদালত হতে পারে ত্যক্তবিরক্ত মানুষের বিরাট ভরসাস্থল।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস